দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান।এই উদ্যানকে পাখিদের অভয়ারণ্য বলা হলেও বন বিভাগের উদাসিনতায় ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে দীঘির পরিবেশ।সংস্কার না করায় লতা পাতা পড়ে দুষিত হচ্ছে দিঘির পানি ও এর চারপাশ।
সরোজমিনে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে দেখা গেছে প্রতিবছর শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আলতাদিঘীর জলে দাপিয়ে বেড়াতো অতিথি পাখি রাজ সরালি, পাতি সরালি, বালি হাঁস, রাজহাঁস, মান্দারিন হাঁস, গোলাপি রাজহাঁস, ঝুটি হাঁস, চকাচকি, চিনা হাঁস, কালো হাঁস, লালশীর, নীল শির, মানিকজোড়, জল পিপি, ডুবুরি, হারিয়াল পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাংচিল এ বছর এদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান সংস্কার ও উন্নয়নের কথা বলে দীঘির দুই পাড় থেকে কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলায় দিঘির পরিবেশ এখন হুমকির মুখে, তেমনি হুমকির মুখে পরিযায়ী পাখিরাও।
স্থানীয় ও পর্যটকদের মতে, শীত মৌসুমের শুরুতে কয়েক হাজার পথ পাড়ি দিয়ে দিঘির পানিতে কলকাকলিতে মেতে উঠতো অতিথি পাখিরা। বর্তমানে দিঘীর গভীরতা কমে যাওয়ার লতা পাতা পড়ে পানি দূষিত হওয়া সহ এর পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসা পাখিদের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে।
যে পাখি গুলো এসেছে সেগুলো দিঘির বিষাক্ত পানিতে স্বাধীন ভাবে বিচরণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় দীঘি খননসহ পঁচা পানি সংস্কার করা না হলে আগামীতে পাখিদের বিচরণ কমে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এদিকে উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান রাজশাহী সামাজিক বনবিভাগের আওতায় নওগাঁ সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দুরে ধামইরহাট উপজেলায় পাইকবান্দা রেঞ্জের অধীনে ধামইরহাট বিটে অবস্থিত। ২০১১ সালে ১৪ ডিসেম্বও পরিবেশ ও বনমন্ত্রনালয় “আলতাদিঘীকে জাতীয় উদ্যান” হিসেবে ঘোষনা দেই। এর মোট আয়তন ২৬৪.১২ হেক্টর। ৪৩ একর আয়তনে গড়ে উঠেছে এক বিশাল দিঘী। জাতীয় উদ্যানের পাশের ১৭.৩৪ হেক্টর বনভুমিকে ২০১৬ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ বন অভিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষনা করা হয়।
আলতাদিঘীতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মতে, দীঘির দূষিত পানি ও দুই পাড় থেকে অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা দেখে বিস্মিত তাঁরা। প্রকৃতির নিসর্গ আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান বন বিভাগের উদাসীনতা কারণে পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে। ফলে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
এদিকে দিঘীর পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিল। দিঘির বুকে পদ্ম ফুলের আড়ালে খেলা করেছে পাখিরা। দিঘির বিবর্ণ দূষিত পানি দেখে দর্শনার্থীরা খোব প্রকাশ করেছে।
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দিঘির পঁচা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। এমন চলতে থাকলে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান থেকে অতিথি পাখিদের কোলাহল থেমে যাবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা বন বিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমতি পেলে দীঘির খনন কাজ শুরু করা হবে। দীঘির দুই পারের গাছগুলো পুরনো হওয়ায় কেটে ফেলা হয়েছে এবং সেখানে শোভা বর্ধনকারী গাছ লাগানো হবে। আবহাওয়ার কারণে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা অনেক সময় আপডাউন করলেও পাখিদের সংখ্যা বেড়েছে।