২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ০৩:১৮:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আরাভ খানকে আটকের তথ্য জানা নেই, জানালেন আইজিপি হাসপাতালের টয়লেটে নবজাতক রেখে পালিয়ে গেছে এক মা, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা ৫৫ কেজি গাঁজা-৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই ব্যবসায়ী গ্রেফতার খালার জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল আপন দুই ভাইয়ের ফেসবুকে প্রেম, ৭১ বছরে এসে বিয়েটা করেই ফেললেন অধ্যাপক শওকত আলী যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর আঘাত, নিহত হয়েছেন প্রায় ২৩ জন আ’লীগ নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আ.লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
বায়ুদূষণে মানুষ বাঁচতে পারে না, কিন্তু অনেক উন্নয়ন না করেও বাঁচতে পারবেন, রিজওয়ানা হাসান
বৃত্ত মিডিয়া ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৩-০১-৩১
বায়ুদূষণে মানুষ বাঁচতে পারে না, কিন্তু অনেক উন্নয়ন না করেও বাঁচতে পারবেন, রিজওয়ানা হাসান

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘পরিবেশ পুরস্কার’ এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’ এ ভূষিত। ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকীর ‘হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট’ খেতাব পান এবং ২০১২ সালে র‌্যামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান।

বায়ুদূষণে রাজধানী ঢাকা ফের বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। এ প্রসঙ্গে বৃত্তমিডিয়া মুখোমুখি হন। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণেই বায়ুদূষণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মত দেন তিনি।

সাক্ষাৎকার : বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

বৃত্তমিডিয়া: বায়ুদূষণে ফের ধুঁকছে ঢাকা। দূষণের দিক থেকে কদিন ধরে শীর্ষে বাংলাদেশের রাজধানী। পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলন করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। কী বলবেন এই পরিস্থিতি নিয়ে?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: যখন থেকে বায়ুদূষণের ভয়ানক চিত্রটা আমাদের সামনে স্থাপন করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন এর দরুন, তখন থেকেই আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। পাঁচ থেকে সাত বছর সময় পেয়েছিলাম আমরা। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু পাঁচ থেকে সাত বছর কমে যায় এটি বেশ আগের গবেষণা। তখন থেকে কঠোর পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা সম্ভব হতো।

বৃত্তমিডিয়া: কী ছিল বিকল্প পথ? আদৌ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমরা কথিত উন্নয়নের বিকল্প উন্নয়নের পথে হাঁটতে পারতাম। পোড়ানো ইটের বিকল্প পথে যেতে পারতাম। সরকার চাইলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জবাবদিহির আওতায় এনে বায়ুদূষণ কমাতে পারতো। গাছ লাগিয়ে, জলাশয়গুলো রক্ষা করেও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যেত। বায়ুদূষণ মানুষের জীবনের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করছে, মরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, মানুষকে কঠিন কঠিন অসুখ দিচ্ছে। এদিকে আমরা ন্যূনতম মনোনিবেশ করছি না। এ কারণেই পরপর পাঁচদিন আমাদের প্রাণপ্রিয় নগরী দূষণের শীর্ষে থাকছে।

অনেক উন্নয়ন না করেও মানুষ বাঁচতে পারে, কিন্তু বায়ুদূষণে বাঁচতে পারবেন না। বায়ু ছাড়া আপনি এক মিনিটও বাঁচতে পারবেন না। বায়ু দূষিত করে ফেলা মানে আপনার জীবনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। আমরা পাঁচ থেকে সাত বছর চেষ্টা করলে অবশ্যই বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রায় আনতে পারতাম। চেষ্টা না করার ফলে আমরা সবচেয়ে দূষিত বাতাসের দেশে পরিণত হলাম।

বৃত্তমিডিয়া: বায়ুদূষণের জন্য কোনটিকে অধিকতর দায়ী করবেন?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি কারণ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আলোচনা করে আসছেন। নগর এলাকায় যানবাহন দ্বারা দূষণ, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দূষণ এবং ইটভাটা থেকে দূষণকে প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে। আর গ্রামে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে দূষণের শিকার হচ্ছেন। কারণ গ্রামের রান্নাঘর থেকে বায়ু নির্গমের যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকে না। আবার যে পেট্রোলিয়াম ব্যবহার করি সেটার মান নিয়েও প্রশ্নে আছে।

বৃত্তমিডিয়া: পরিবেশ নিয়ে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় রয়েছে। পরিবেশবাদীরাও সোচ্চার। তবুও কার্যকর পদেক্ষপ নেই। দায় আসলে কার?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: অপরিকল্পিত উন্নয়ন ভাবনাকে আপনি প্রথমত দায়ী করবেন। আমাদের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন উন্নত বিশ্বও এমন দূষণের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন করেছে। এই কথাটি মোটেও ঠিক নয়। পরিবেশকে আমলে না নিয়ে এমন উন্নয়নের ফল কী হতে পারে, তা জানাই ছিল না। মূল্যও দিতে হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তো আমরা সব জানি। বিকল্পও আছে।

মেগা প্রকল্প পরিবেশ রক্ষা করেও তো করা যায়। যাকে কন্ট্রাক্ট দিচ্ছেন তাকে মনিটরিং করেন। এতে তো কোনো সমস্যা নেই। যারা এসব প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা হয়তো আপনার আমার মতো বিষাক্ত বায়ু সেবন করে চলছেন না। এ কারণেই তাদের হয়তো অনুভূতিটা আমাদের মতো না।

বৃত্তমিডিয়া: সরকার বিশ্ব ফোরামে গিয়ে জলবায়ু, পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরে কথা বলছে। পুরস্কারও পাচ্ছে। অথচ দূষণে বিপরীত চিত্র উঠে আসছে। এর আসলে ব্যাখ্যা কী?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: বাংলাদেশে পরিবেশ আদালত করা হয়েছে। ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এখানে কোনো কার্যকারিতা নেই। আবার এই আদালত বাতিলও করছে না। পরিবেশ আদালতে বছরে ছয়টি মামলা হচ্ছে। ধীরগতির আদালতের মধ্যে বাংলাদেশের পরিবেশ আদালত বিশ্বে শীর্ষে। পুরস্কার দিয়ে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে কোনো না কোনোভাবে উৎসাহিত করতে চায়। সুতরাং পুরস্কার পেলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।


বৃত্তমিডিয়া : এই বিষবাষ্প নিয়ে আমরা যাচ্ছি কোথায়?

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: সরকার বায়ুদূষণ রোধে কিন্তু আইনও করেছে। বিধিমালা করার সময় সরকারের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। কিন্তু এই বিধামালা বাস্তবায়নে সরকার যে এক পদক্ষেপ এগোবে, তা আমরা দেখতে পাইনি।

বায়ুদূষণ রোধে যে বিধিমালা করা হয়েছে, তা প্রাধান্য দিয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যাপক বিনিয়োগ করে বায়ুদূষণ কমাতে হবে, তা নয়। ছোট ছোট অনেক কাজ করেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি। সরকারকে আদালতও নির্দেশনা দিয়েছেন।

আদালত নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, বাতাস অস্বাস্থ্যকর হয়ে গেলে তখন সতর্কাবস্থা জারি করতে হবে। সরকার সতর্কাবস্থা জারি করলো না। এটি কিন্তু আদালত অবমাননার শামিল। সরকার নিজে থেকে করার কথা। অথচ, আদালত বলার পরেও করছে না। তার মানে আমাদের রাজনৈতিক কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।

সুতরাং, জনমত তৈরির মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা ছাড়া কোনো বিকল্প আছে বলে মনে করি না।

শেয়ার করুন