২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ০২:২৬:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আরাভ খানকে আটকের তথ্য জানা নেই, জানালেন আইজিপি হাসপাতালের টয়লেটে নবজাতক রেখে পালিয়ে গেছে এক মা, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা ৫৫ কেজি গাঁজা-৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই ব্যবসায়ী গ্রেফতার খালার জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল আপন দুই ভাইয়ের ফেসবুকে প্রেম, ৭১ বছরে এসে বিয়েটা করেই ফেললেন অধ্যাপক শওকত আলী যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর আঘাত, নিহত হয়েছেন প্রায় ২৩ জন আ’লীগ নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আ.লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে রোগীদের সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী
সিলেট প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৩-০২-২০
হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে রোগীদের সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী

বিভিন্ন অনিয়ম আর গাফিলতির অভিযোগ  সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কোন সময় হাসপাতালে রোগীর সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। হাসপাতালের ১১নং ওয়ার্ড হলো গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়ার্ড। যেটি সার্জারি ওয়ার্ড নামেই পরিচিত। এই ওয়ার্ডে দুর্ঘটনায় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে যাওয়া রোগীরা আসেন যাদের তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার করতে হয়।

জানা যায়, ১১নং ওয়ার্ডে প্রায়ই রোগীদের কাটাস্থানে সেলাই দিয়ে থাকেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর রহমান। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১নং ওয়ার্ডে এমন ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হতে না হতেই ঘিরে ধরেন ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা সহজ সরল রোগীদের সামনে চিকিৎসকের সহকারীদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তারা। এরপর বিনিময়ে রোগীর স্বজনদের থেকে সুযোগ বুঝে দাবি করা হয় অর্থ।

সেখানে দেখা যায়, হাসপাতালের শয্যায় আব্দুল করিমের মাথা কামিয়ে নিচ্ছিলেন এবাদুর রহমান। এর একটু পর এসে যোগ দেন তার সহকর্মী সাইফুল ইসলাম। এ সময় এবাদুরকে রোগীর হাতে স্যালাইন পুশ করতেও দেখা যায়।

তার সঙ্গে এ কাজে যোগ দেওয়া সাইফুল ইসলামও হাসপাতালের আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নিতে এমনটি করে থাকেন তারা।

হাসপাতালের তৃতীয় তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে (সার্জারি) পুরুষ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন এবাদুর রহমান। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি প্রায়ই রোগীদের কাটাছেঁড়ায় সেলাই দিয়ে থাকেন। এছাড়া হাসপাতালে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন এবাদুর।

ওয়ার্ডে নতুন কেউ ভর্তি হলে তিনি রোগীর স্বজনদের কাছে ওষুধ থেকে শুরু করে সেলাইয়ের সুতা, সুই, হাতের গ্লাভসসহ বিভিন্ন ওষুধ সামগ্রীর তালিকা ধরে দেন। পরে সেগুলো ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হয় রোগীর স্বজনদের।

রোগীর জন্য দুটি সেলাইয়ের সুতার প্রয়োজন হলেও এবাদুর বেশি পরিমাণে আনতে বলেন। সেলাইয়ের প্রতিটি সুতা হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানগুলো থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনতে হয়।

পরে রোগীর স্বজনরা সেগুলো ওয়ার্ডে এনে বুঝিয়ে দেওয়ার পর একটি বা দুটি সুতা কাজে লাগিয়ে বাকিগুলো রেখে দেন এবাদুর। সেগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আবার ওষুধের দোকানগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই হাত ঘুরে সুতা বিক্রির টাকা চলে আসে এবাদুরের পকেটে।

চিকিৎসকের বদলে অদক্ষ হাত দিয়ে সেলাই দেওয়ায় অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন রোগীরা। আবার হাত পরিষ্কার না করে এবং গ্লাভস না লাগিয়েই ক্ষতস্থানে হাত দেওয়া এবং ভুল স্টিচের কারণে সেলাই দেওয়ার পর অনেক সময় রোগীর ক্ষতস্থানে ‘ইনফেকশন’ হয়ে যায়।

জানা যায়, সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের করনসি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম (৫০)। ১২ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে জায়গা সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি।

পরে তাকে ওই দিন দুপুরের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় আব্দুল করিমকে। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর আব্দুল করিমের মাথায় সেলাই দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

তবে ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের বদলে সেলাই দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর। ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত এক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর প্রায়ই এমন করেন। সহজ–সরল রোগী এবং স্বজনেরাই মূলত তার টার্গেট।

এ বিষয়ে তাকে একাধিকবার নিষেধও করা হয়েছে। আব্দুল করিমের বেলায়ও তেমনি করেছে এবাদুর। ওই রোগী ১২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসা নিয়ে ছাড়পত্র পান পরের দিন। রোগী আব্দুল করিম জানান, রোববার দুপুরে মাথার সেলাই কাটার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন আব্দুল করিম।

তিনি জানতেন না চিকিৎসকের বদলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেলাই দিয়েছেন। হাসপাতালে এসেছেন মাথার সেলাই কাটার জন্য। তার মাথায় ১৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছিল। স্ত্রীর কাছ থেকে ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী কত টাকা নিয়েছিল তা জানাতে পারেননি তিনি।

ভিডিও চিত্রে রোগীর মাথায় সেলাই দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবাদুর রহমান বলেন, অনেক সময় আমাকেই সামাল দিতে হয়। কারণ ইন্টার্ন ডাক্তার থাকলেও অনেকেই সেলাইয়ের বিষয়ে অজ্ঞ তাই আমি রোগীকে সেবা দেই।

পরিছন্নতাকর্মী হয়ে রোগীর মাথায় সেলাই দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি।

এটি নিয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্সে। এতো বড় হাসপাতালে আমরা এই ধরনের সুযোগ নেওয়া নিয়ম বহির্ভূত কারণ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স ছাড়া কেউ সেবা দিতে পারবে না। এই ব্যাপারে আমাদের লিখিত ও মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। ভিডিও চিত্রে যারা চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন