প্রসূতির মৃত্যু, ক্লিনিকে তালা লাগিয়ে লাপাত্তা চিকিৎসক-নার্স। ঘটনাটি বরগুনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সদর উপজেলার মহাসড়ক এলাকায় অবস্থিত কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
এরপর থেকেই ক্লিনিকটির চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এ ঘটনার পর আজ সকাল থেকে ক্লিনিকে তালা লাগিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন ক্লিনিকের মালিক ও সংশ্লিষ্টরা। প্রথমে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেও পরবর্তীতে অভিযোগ অস্বীকার করেছে নিহত প্রসূতির পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, বরগুনার বদরখালী এলাকার তানজিলা পুতুল নামের এক নারী এই হাসপাতালে ভর্তি হন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক নবজাতকের জন্ম দেন তিনি। তবে অপারেশন শেষ হলেও জ্ঞান ফেরেনি ওই প্রসূতির। এরপর গতকাল রাতেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে মধ্যরাতের দিকে তিনি মারা যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু এবারই নয়, আগেও বহুবার ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই ক্লিনিকে। এছাড়া কয়েক বছর আগে এই ক্লিনিকে ভর্তি এক নবজাতককে চুরি করে বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার।
প্রতিবছরই এখানে ভুল চিকিৎসায় কোনো না কোনো প্রসূতি মারা যায়। এ কারণে এ বছর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স নবায়ন করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। এতকিছুর পরেও বহাল তবিয়তে চলছে ক্লিনিকের কার্যক্রম। ভুল চিকিৎসায় আর যেন কোনো রোগীর মৃত্যু না হয়, সেজন্য এই ক্লিনিকটি বন্ধের দাবি জানায় সচেতন মহল।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বারের সহসভাপতি আরিফ হোসেন ফসল বলেন, এই ক্লিনিক চালু হওয়ার পর থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচিত। প্রতিবছরই ভুল চিকিৎসায় কোনো না কোনো রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
প্রথমে পরিবারগুলো অভিযোগ করলেও পরবর্তীতে তা অস্বীকার করে। আর এভাবেই পার পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে দাবি, যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করে এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে বরগুনা কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ফজলুল হক মন্টুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুল হক বলেন, এই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ছিল। আমি আসার পর এখানে অস্ত্রোপচারের সময় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পেয়েছি।
ওই বিষয়টি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছেন। শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। গতকালের ঘটনাটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।