গণমাধ্যমে সংবাদের পর সুবর্ণার পাশে দাঁড়ালেন ব্যারিস্টার সুমন। আমার স্বপ্ন আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী হব। অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণপদক জয় করে আমি বাংলাদেশকে দেখাব।' এমনটাই জানান বিকেএসপিতে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করা সুবর্ণা।
বুধবার (৮ মার্চ) ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। সুবর্ণা স্কুল ও জাতীয় পর্যায়ে অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক পেয়েছেন। এছাড়া এ বছর অর্জন করেছেন দৌড় ও দীর্ঘ লাফে জেলা, বিভাগ এবং অঞ্চল পর্যায়ে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্চ পদক।
কিন্তু এতসব অর্জনের পরেও অর্থের অভাবে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারছিলেন না সুবর্ণা। দরিদ্র ভ্যানচালক বাবার পক্ষে তার ভর্তির টাকা যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। গত ৬ মার্চ চ্যানেল 24 অনলাইনে সুবর্ণার এমন সংবাদ প্রকাশের পরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
নিজের ফেসবুকে এক ভিডিও প্রকাশ করে তিনি জানান, সুবর্ণার এক বছরের পড়াশোনার খরচ তিনি বহন করবেন। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, চ্যানেল 24 অনলাইনে সুবর্ণা খাতুনের সংবাদটি দেখেই আমি তার বাবাকে ফোন দিয়ে কথা বলেছি।
সুবর্ণা ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলে আমি তাদের নিশ্চিত করেছি যে, আজকে সন্ধ্যায় তাদের ২৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেব। এরই মধ্যে সুবর্ণার বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলেন তিনি। বাবাসহ সুবর্ণা এবং তার শিক্ষককে ঢাকায় নিজের চেম্বারে নিয়ে আসেন ব্যারিস্টার সুমন।
বুধবার (৮ মার্চ) তাদের সঙ্গে নিয়ে ফেসবুকে আরও একটি ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। সেই ভিডিওতেই নিজের স্বপ্নের কথা জানান সুবর্ণা খাতুন।
ভিডিও বার্তায় তার শিক্ষক নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ব্যারিস্টার সুমনকে বলেন, আপনার মতো বড় মাপের মানুষ যদি প্রতি জেলায় থাকত এবং আপনার মতো তারাও একটি করে সুবর্ণার দায়িত্ব নিত তবে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকত না।
বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যেত। এসময় সুবর্ণার বাবা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমার মেয়ে শুধু আমার জন্যে না, বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের হয়ে যেন কাজ করে যেতে পারে সেটাই আমি চাই।
যারা সুবর্ণাকে আমাদের পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ব্যারিস্টার সুমন ভিডিও বার্তায় বলেন, সম্পদের নেশা আমার মধ্যে নেই। আমি চাই সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়তে। কেউ যেন ঝরে না পরে।
আজকে আমিও হবিগঞ্জের মতো একটি জায়গার জন্মানোর পর অনেক কষ্ট করে এই জায়গা পর্যন্ত এসেছি। তাই হয়তো সুবর্ণাদের কষ্টগুলো আমি আমার হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করি। তিনি আরও বলেন, আজকের এই সুবর্ণাও একদিন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমরা কেউ জানি না ভবিষ্যতে কে কোথায় থেকে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। তাই আসেন আমরা একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করি। সেই সঙ্গে পৃথিবীর বুকে একটি সুন্দর জাতি হিসেবে যেন আমরা দাঁড়াতে পারি।
আপনারা সুবর্ণার জন্যে দোয়া করবেন যেন যে স্বপ্ন সে দেখেছে সেটা বাস্তবায়ন হয়। আমি যেন বলতে পারি জন্মদাতা না হয়েও অনেক মানুষের দায়িত্ব নিয়ে পিতার দায়িত্ব পালন করা যায়। এ বছরের গত ৩১ জানুয়ারি বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিক্স বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষায় বালিকা বিভাগ থেকে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে সুবর্ণা।
এছাড়া শেখ কামাল অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পারিবারিক ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুবর্ণা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০২১ সালে পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত বার্ষিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটার এবং রশি দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে।
এরপর ২০২২ সালে জেলা, উপজেলা, উপ-অঞ্চলে (আট জেলা) দীর্ঘ লাফে প্রথম এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে। পরে জাতীয় পর্যায়ে দিনাজপুর স্টেডিয়ামে ২০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক পান।
এ বছর উপজেলা, জেলা, উপ-অঞ্চল ও অঞ্চল পর্যায়ে ১০০ এবং ২০০ মিটার দৌড় ও দীর্ঘ লাফে এবং রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে চ্যাম্পিয়ন হন সুবর্ণা।
এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে যশোরে রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণ পদক এবং দীর্ঘ লাফে রৌপ্য পদক ও দৌড়ে ব্রোঞ্চ পদক পান।