প্রতিবন্ধিতা একই প্রকারের বা ধরনের না, ভিন্ন ভিন্ন রূপে এটি দৃশ্যমান হয়।প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়, এবারও ৩১তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভাবনার বিষয়টি জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস নামে গৃহীত হয়েছিলো। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সব ধরনের প্রতিবন্ধী দৃশ্যমান নয়’।
বিশেষ এ দিনটি ‘প্রতিবন্ধী দিবস’ কিংবা ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস’ হিসেবে পালিত হয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে কখনো ‘প্রতিবন্ধী’ বা ‘অক্ষম’ বলা যাবে না।তাঁদের ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ বলুন। প্রতিবন্ধী মানুষটার দিকে একটু সদয় হউন, তার প্রতিবন্ধিতার দিকে না।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিশ্বের বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং প্রায় ৮০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হিসাবমতে, পৃথিবীতে যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে তা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে ৭৮৫ মিলিয়ন ব্যক্তির বয়স ১৫-৫৯ বছরের মধ্যে,তারা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটা অংশ।
এদিকে সর্বশেষ জনশুমারি বলছে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রতি দশ জনে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ মতে মোট ১২টি প্রতিবন্ধিতা চিহ্নিত করেছেঃ ১. অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার ২. শারীরিক প্রতিবন্ধিতা ৩. মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা ৪.দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা ৫. বাকপ্রতিবন্ধিতা ৬. বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা ৭. শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা ৮. সেরিব্রাল পালসি ৯. ডাউন সিনড্রোম ১০. শ্রবণ-দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা ১১. বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা এবং ১২. অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
প্রতিবন্ধী শ্রেণির ব্যক্তি আমাদেরই সন্তান, আমাদের পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাকে জিজ্ঞাসা করে সাহায্য করতে হবে। কেননা তার প্রয়োজনটা তাহলে সে সঠিকভাবে জানাতে পারবে।
প্রতিবন্ধী শ্রেণির ব্যক্তিদের সাথে আপনি যেভাবে সদয় হবেনঃ
প্রথমত, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় প্রথমে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলুন এবং তাকে ডাকতে হলে তার নামটি জেনে নিয়ে তার সাথে কথা বলুন। তাঁর প্রতি সহযোগিতা মনোভাব দেখান।
দ্বিতীয়ত, হুইলচেয়ারে বসা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে কথা বলতে হলে চেষ্টা করতে হবে একটু ঝুঁকে তার সমাবস্থায় গিয়ে কথা বলা। তাকে সহায়তা করতে চান, কিন্তু কখনোই ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া হুইলচেয়ার ধরবেন না।
আবার, শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় তার সামনে বসে কথা বলেন, কখনই তাঁর পেছনে বসে কথা বলবেন না। খেয়াল করতে হবে, যে শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আপনার ঠোঁটের নাড়াচাড়া খেয়াল করতে পারছেন কি না। প্রয়োজনে, কাগজ-কলম ব্যবহার করবেন। মনে রাখতে হবে, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্ধকারে যেতে ভয় পান, তাই তাঁর ঘরে পর্যাপ্ত আলো জ্বালিয়ে রাখুন।
অন্যদিকে, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা সময় নিয়ে শুনতে হবে এবং মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। তবে এটা ভাব্বেননা যে তাঁর কোনো জ্ঞান বা মতামত নেই।তবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভয় পাবার কিছুই নেই। মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী কাছ থেকে আপনার বাচ্চাকে সরিয়ে নেবেন না, এতে করে তাঁর মনে আঘাত লাগতে পারে।
একটা বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিবন্ধী শিশুর মা বাবাকে করুণা দেখাবেন না। কেননা প্রত্যেক শিশু তার মা বাবার কাছে মূল্যবান। প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে সাধারণ অন্য পাঁচ দশটা শিশুর মতোই আচরণ করুন।
সবশেষে একটাই কথা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবকাঠামো প্রতিবন্ধীবান্ধব হোক। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর আলোকে প্রণীত বিধিমালা এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভাবে গঠিত সমন্বয় কমিটিগুলো কার্যকর থাকুক। সুশীল সমাজ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি সংগঠনসমূহের সমন্বিত উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা জানি বাংলাদেশ সরকারের অধীনে সব চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ দেয়া আছে। সরকারের সহযোগিতা সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হাতে পৌঁছে যাক একামনা রইলো।